শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন

সন্তানকে ব্যর্থতার মোকাবিলা করতে কীভাবে শেখাবেন….?

সন্তানকে ব্যর্থতার মোকাবিলা করতে কীভাবে শেখাবেন….?

স্বদেশ ডেস্ক: জীবনে ব্যর্থতা অনিবার্য। ব্যর্থতা এলেও, তাকে পজিটিভিটির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। সন্তানকে ব্যর্থতার সঙ্গে যুঝতে কীভাবে শেখাবেন? । মিড টার্ম একজামিনেশনে কি আপনার আদরের কন্যাটি আশানরূপ ফল করতে পারেনি? বা আপনার পুত্রটি কি শত চেষ্টার পরও সাধের ফুটবল টিমে যোগদান করতে ব্যর্থ হয়েছে? বা আপনার উচ্চাকাঙক্ষী মেয়েটি তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন পায়নি? যে কারণেই হোক, আপনার সন্তান যেমনটা আশা করেছিল, ঠিক তার উল্টোটাই হয়েছে। এর ফলে সে মনমরা হয়ে পড়েছে। এই ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক। কোনও একটা লক্ষ্যের জন্য আপ্রাণ চেষ্টার পরও যদি সেটি অপূর্ণ থেকে যায় তার চেয়ে বেদনাদায়ক পরিস্থিতি খুব কমই রয়েছে। কিন্তু তা বলে তাকে ভেঙে পড়তে দেওয়া চলে না।
জীবনে ব্যর্থতা অনিবার্য। সব সময় সকলের প্রত্যাশা পরিপূরণ করা সম্ভব নয়। আপনার খুদে এই কঠিন সত্যটি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল। নিজের জীবনকে সংকীর্ণ ‘হার-জিত’ পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে থাকলে আপনার সন্তান ক্রমশই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়বে। এই জন্য বাচ্চাকে শৈশব থেকেই ব্যর্থতা সামলানোর শিক্ষা প্রদান করা খুব জরুরি। সাফল্য বা ব্যর্থতা যে কোনও ব্যক্তিকে বিচার বা মুল্যায়ন করার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারেনা, সে শিক্ষাও তাকে দেওয়া দরকার। জেনে নিন যে কীভাবে আপনার সন্তানকে ব্যর্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবেন:Ñ
নিজের হতাশা সন্তানের সামনে প্রকাশ করবেন নাÑনিজের আদরের সন্তান কোনও ব্যাপারে অকৃতকার্য হলে, কোন মা বাবা না হতাশ হন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সন্তানের সামনে যদি ভেঙে পড়েন বা ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলেন, তাহলে সেও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। মনে রাখবেন যে আমাদের মতো, বাচ্চাদেরও নিজেদের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে একটা সুক্ষ্ম আত্মমর্যাদা বোধ থাকে। পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অভাবে, সাধারণত বাচ্চাদের আত্মমর্যাদাবোধ বড়ই ভঙ্গুর হয়। তাই কোনও কারণে আপনার থেকে কোনওরকম তিক্ততা বা অসন্তোষ যদি ও অনুভব করে তাহলে ও সহজেই বিহ্বল এবং হতাশ হয়ে পড়বে। এই সময় ওর দরকার আপনার তরফ থেকে নিঃশর্ত ভালবাসা এবং সমর্থন।
ব্যর্থতার প্রতি ভীতি কাটানÑব্যর্থতা যে কোনও ভয় পাওয়ার বস্তু নয় এই শিক্ষা আপনার সন্তানকে অর্জন করতে হবে। কোনও ব্যাপারে শিক্ষালাভ করবার জন্য ব্যর্থতার যে কোনও বিকল্প নেই এই ধ্রুব সত্যটি তাকে বুঝতে হবে। একই সঙ্গে, কোনও ব্যাপারে অসফল হওয়ায় যে কোনও লজ্জা নেই সেটাও তাকে বুঝতে দিন। কোনও বিষয়ে সে অকৃতকার্য হলে ওর প্রতি আপনার ভালবাসা একটুও কমবে না এ ব্যাপারেও ওকে আশ্বস্ত করুন। সাধারণত বাচ্চাদের একটা আশঙ্কা থাকে যে কোনও ব্যাপারে সে অসফল হলে তার মা-বাবা কতটা আঘাত পাবে। এই ক্ষেত্রে ওকে বোঝান যে লেখাপড়াই হোক বা খেলাধুলো, ওর কাজের প্রতি ও একনিষ্ঠ হলেই আপনি সন্তুষ্ট। কোনও ব্যাপারে তার চেষ্টার যে ত্রুটি নেই, তাতেই আপনি গর্বিত। অতঃপর সে সেই ক্ষেত্রে কতটা সফলতা অর্জন করল সেই নিয়ে আপনি বিচলিত নন। সাফল্যের থেকেও জরুরি নিজেকে উন্নত করবার প্রয়াস।
কোনও ব্যাপারে অত্যাধিক প্রত্যাশা করতে উৎসাহ দেবেন না- কোনও ফলের আশা না করেই কর্মে মনযোগ করার শিক্ষা, খোদ ভগবত গীতাতেই মেলে। কোনও ব্যাপারেই অত্যাধিক প্রত্যাশা করবার প্রবণতা ভাল নয়। অত্যাধিক আশাবাদী হওয়াটা যে মুর্খামি, সেই শিক্ষাটা ছোট থেকেই শেখানো উচিত। কোনও বিষয়ে ফলাফল বা পরিণাম যে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, এই শিক্ষা সে যত তাড়াতাড়িই শিখবে ততই মঙ্গল। এতে চরম ব্যর্থতাকেও ও সহজেই গ্রহণ করতে শিখবে। কোনও ব্যাপারে সাফল্যও যখন আসবে সেটি এক বাড়তি পাওনা হবে।
কোনওরকম তুলনায় যাবেন না-এই সময় পারতপক্ষে কোনওরকম তুলনা থেকে দুরে থাকুন । সাফল্য যে একটি আপেক্ষিক বিষয় সেটি ওকে বুঝতে দিন। পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করাই যে সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয় সেটা ওকে বোঝান। নিজের প্রচেষ্টায় ও যতটুকু অর্জন করেছে তাতে গর্ব করতে উৎসাহ দিন। এই সময় বাচ্চারা মানসিকভাবে অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়। কোনও রকম তুলনায় গেলেই ওর মধ্যে হীনমণ্যতা দেখা দেবে। এই ক্ষেত্রে কোনও রকম ‘রোল মডেল’ বা আদর্শ না থাকাই ভাল। কোনও ‘আদর্শ’ সহোদর বা বন্ধু, বা সহপাঠীর থেকে সে কোনও ভাবে ‘হীন’ এই বোধ খুব সহজেই বাচ্চাদের মর্যাদাবোধকে শেষ করে দিতে পারে। ও যে ওর মতো করে সার্থক, এটা ওকে বোঝান।
ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে , ব্যর্থতা জয় করে সেই থেকে শিক্ষালাভ করাটাই যে সাফল্যের আরেক রূপ, সেটি আপনার সন্তানকে উপলব্ধ করতে সাহায্য করুন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877